Posts

মরণ বিলাস

 মৃত্যু নিয়ে আমার মাঝে বেশ আয়েশী ভাব কাজ করে। আমি কিভাবে বেঁচে থাকতে চাই সে ব্যাপারে আমার খুব একটা মাথা ব্যাথা না থাকলেও আমি কিভাবে মারা যেতে চাই, সে নিয়ে আমার সুক্ষাতিসুক্ষ চাহিদা আছে। চাহিদাগুলোর পূরণ শুধু আমার কেন, কারো হাতেই নেই বলা যায়। আর সে কারণেই এই বেয়াড়া চাহিদাগুলো এত আরাধ্য।  ইদানীং আমার হুট করে মারা যাবার ইচ্ছেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে ঝুম বৃষ্টিতে মারা যাবার ইচ্ছে। শব্দের কারিগর হুমায়ূন আহমেদ মরণ চেয়েছিলেন চান্নিপসর রাইতে। কেন কে জানে? এই পৃথিবীতে ফিনিক ফোটা জোছনা নামবে, আর তিনি থাকবেন না, এর চেয়ে বড় আফসোস তার আর বোধহয় ছিল না। লেখকরা বোধহয় এমনই হন। অজস্র্য অমূল্য জিনিস তাদের জীবনে থাকলেও শুধুমাত্র কোন এক ঠুনকো জিনিসের অভাবে তাদের পুরো জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়। সাফল্যের গল্পগুলো বোধহয় খুব বেখেয়ালী। নাহলে কেন নির্মলেন্দু গুণ শুধু কারো ঘুমের মাঝে দীর্ঘশ্বাসের জন্য মারা যেতে চাইবেন? কবিদের হয়তো খামখেয়ালী হতেই হয়, নাহলে হয়তো কবিত্ব হাঁপিয়ে ওঠে।  আমার অচিনদেশে পাড়ি দেবার দিনে পুরো আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি নামে। সোঁদা মাটির গন্ধ যেন হয়ে ওঠে আমার আগরবাতি। ঝুম বৃষ্টি যেন ছাপিয়ে যায় আমার শেষ

যাপন এবং জীবন

Image
আমার ডর্মের ছয় স্টেশন পরে "হফগার্ডেন" বলে একটা পার্ক আছে। আদতে তেমন দেখার মত কিছুই না, সাজানো গোছানো পরিপাটি অবস্থা। বেশ কিছু ফোয়ারা আছে আর আছে একটা গম্বুজ দিয়ে ঘেরা জায়গা। সেই গম্বুজের নিচে বেশি খানিকটা ফাঁকা জায়গা। আমার মতে এই গম্বুজের নিচের জায়গাটা মিউনিখের অন্যতম সুখী একটা জায়গা। এই গম্বুজের নিচে সবসময়, বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে বিভিন্ন নাচ হয়। কখনো আফ্রো-কিউবান রুম্বা, কখনো ব্রাজিলিয়ান সাম্বা কখনো ওয়ালটজ। বুড়ো-বুড়ি থেকে শুরু করে টিনএজরাও সমান তালে অংশগ্রহণ করে। সামারে সাধারণত খুবই ফেস্টিভ একটা জায়গা। আমার এসব জায়গায় যাওয়া হয় কম ইদানীং, লকডাউনে থাকতে থাকতে মনটাও লকডাউনে চলে গেছে। বের হওয়ার ইচ্ছা এবং শক্তি কোনটাই তেমন থাকে না। তবুও কি ভেবে যেন গেলাম সেদিন সকালে। গম্বুজের নিচে তাকিয়ে দেখি দুইজন মাত্র মানুষ নাচ প্র্যাক্টিস করছে, সম্ভবত কিউবান চা-চা ড্যান্স বা সেই গোত্রীয় কিছু। যেই মধ্যবয়সী ভদ্রলোক শিখছেন তিনি মনে হলো ইউরোপীয়ান আর যেই ভদ্রমহিলা শেখাচ্ছেন তিনি এশিয়ান। আমি টানা ৪৫ মিনিট ধরে তাদের নাচের কান্ডকীর্তন দেখে গেলাম। জীবনে এত প্যাশন নিয়ে ভুল নাচতে কাওকে আমি দেখিনি!

একদিন সব ছাইড়া চইলা যাবো

একদিন সব ছাইড়া চইলা যাবো। এই কাঠগোলাপ, সাদার মায়া সব কিছু ঝাপসা লাগবে। এইযে ভিকারুননিসার সামনে আমড়া আর বড়ইয়ের আচার বেঁচা মামাটা তার কাছেও লাল আমসত্ত্বটা বাড়ায় দেয়ার জন্য ঘ্যানঘ্যান করবো না। নীলক্ষেতের মামা ভুইলাই যাবে যে এক শ্যামলা কইরা লম্বাটে এক মাইয়া তার কাছে তাবৎ বাংলা বইয়ের দাম অর্ধেকে নামায় আনার জন্য বিষম চেষ্টা কইরা যাইতো। কিন্তু দিনশেষে মাইয়ার টিউশনির টাকা যাই থাকুক না কেন, মামার তো সংসার চালাইতে হবে। এই শালার কঠিন রোদে পুইড়া বিক্রি করা বইগুলান তো মামার জীবিকা, মাইয়াটার মতো বিলাসিতা না। একদিন ঠিকঠাক সব ছাইড়া চইলা যাবো। পাঁচ নাম্বারের গলির মুখের মামার কাছে কয়েক বাটি বেশি টকের জন্য চিল্লাবো না। নিজের বন্ধু বান্ধবীদের সাথে আমারে কেন পাত্তা দেয় না এহেন তর্ক নিজেই তুলিয়া নিজেই যুক্তি দিয়া নিজেই জিইতা গিয়া পার্ট নেয়ার চেষ্টা করবো না। চিল্লাচিল্লি করে কিছু হয় না। যা হওয়ার তা আপসে হয়, যা হয় না তা হয় না। এই ক্ষুদ্র জীবনে এইটুকুন শিক্ষা হইসে। মাটির মনে যদ্দুর মায়া ধরে তদ্দুর মায়া এই শরীরের পরতে পরতে মাইখা আছে। এর বেশি আশা এই মানব বৃক্ষের নাই। একদিন সত্যি সত্যি সব ছাইড়া চইলা যাবো। হকা

হসন্ত ৩

হসন্ত, আমি আসলে তোমাকে অতিরিক্ত ভালোবাসি৷ আমার মত বিচ্ছিরি কাঠখোট্টা মানুষকে ভালোবাসা শেখানোর মত দুঃসাহস করার জন্য তোমাকে আমি বিশ্রীরকম ভালোবাসি৷ আমার আগাপাশতলা কংক্রীটের শরীরটাতে ধুলোবালি মাখিয়ে দেয়ার জন্য তোমাকে আমি ভীষণভাবে ভালোবাসি। একটা নেহায়েতই আটপৌরে সত্ত্বাকে বুকে চেপে ধরার জন্য তোমাকে আমি এই বাস্তব জীবনে অবাস্তবের মত ভালোবাসি। পবিত্রতার প ও যেই মানুষের মধ্যে নেই তাকে এত গভীরভাবে ভালো কিভাবে বাসো তা আমার জানা নেই। মাটির সাথে মিশিয়ে দাও, তাও কেন মধ্যরাতে ঘুম ভাংগলে তোমার সাথে গা ঘষতে ইচ্ছে করে জানি না৷ এতটা ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দেইনি তোমাকে, কিন্তু মনে হয়েছে এত ভালো না বাসলে বড় অন্যায় হয়ে যাবে৷ তুমি আজীবন আমার বড় আরাধ্য রয়ে যাবে জানো? অপূর্ণতায় প্রচুর আবেগ থাকে, তুমিও তাই৷ তোমার থেকে দূরে যাওয়া মানে তোমার মাঝেই ঘুরে ফিরে আসা বারেবার, এটা কি তুমি বোঝো? ইতি তোমার দেয়া আমার কোন, নাম ছিলো না, নাম ছিলো না...

সুবোধ, একটা কবিতার বড্ড প্রয়োজন

একটা কবিতার বড় দরকার বুঝলে সুবোধ।  তোমার ঐ মামুলি কালিঝুলিতে মাখা কার্টুন যতসব-  শুধু একটাই কথা, পালিয়ে যা, পালিয়ে যা!  এ দিয়ে বিপ্লব টিপ্লব হবে না বাপু!  ও দিয়ে বড়জোর জায়গা করা যাবে বিক্রি হয়ে যাওয়া দৈনিক পত্রিকার সাপ্লিমেন্টারিতে!  একটা কবিতার বড্ড দরকার সুবোধ।   যে কবিতার ডিসপেন্সারিতে আশ্রয় নেবে শত সহস্র আহত শব্দেরা।  যে কবিতা খুলি চেপে ধরতে পারবে, যোনীপথ ছিড়ে খুবলে খাওয়া শকুনদের।  একটা কবিতার বড়ই দরকার সুবোধ। রাজপথ, রক্ত, ক্ষুধার মত ক্ষোভ- বুলেট, সম্ভ্রম, মাতৃকান্নার মত মাতম- রিমান্ড, জামিন, ন্যায় বিচারের মত নাটক- সবকিছু মিলিয়ে টগবগিয়ে ওঠা, একখানা কবিতা বড় দরকার।  একটা কবিতার বড় প্রয়োজন সুবোধ। তোমার ঐ হারকিউলিসের মত রহস্য আর- নিগূঢ় চিত্রকল্প বড্ড ওয়েস্টার্ন হয়ে যাচ্ছে ভায়া। আমজনতা রগরগে ছবি জানে, বোঝে, অনুভব করে। পরনের রক্তাক্ত সালোয়ার, উড়ে যাওয়া বাহারি রঙ্গিন ঘোমটা, এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়া অমানবিক রডটা কিংবা মাথার ওপরের মানবিক আব্রুখানা- সব মিলিয়ে একটি অতি নির্মম ছবি দরকার।  বিপ্লবের জন্যে,  সেই বিপ্লবের পেট থেকে তৈরি

"ওপারে থাকবে তুমি"

Image
আমি যখনই দেখি ফেসবুকে কেউ কারো মৃত্যু সংবাদ দিচ্ছে, আমি মানুষটাকে ফেসবুকে খুজি। আমি হয়তো চিনিও না, আমি তাও খুজি। খুজে খুজে তার কাছের মানুষদের বের করি। আমি তার কাছের মানুষদের স্টক করি। আমার কাছে অন্তত ৬-৭ জন বাবা-মায়ের লিস্ট আছে যাদের সন্তান মারা গেছে, বিয়ের পরদিন সকালে মারা গেছে এমন নববধূ আছে, ৯ বছর প্রেম করে বিয়ের ১ বছরের মাথায় ক্যান্সারে মারা যাওয়া স্ত্রীর স্বামী আছে, একই সাথে বড় হওয়া ভাইয়ের মত বেস্ট ফ্রেন্ড পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার পর ভেঙে পড়া বন্ধু আছে, একই গাড়িতে এক্সিডেন্ট করে পাশের সিটে বসে থাকা মারা যাওয়া মেয়েটার বোন আছে, ২ মাস আইসিইউ-সিসিইউতে ভুগে বিদায় নেয়া লোকটার মেয়ে আছে। আমি এদের প্রতিটা মানুষের প্রোফাইল মাসে অন্তত একবার হলেও ঘাটি।  মৃত্যু ব্যাপারটা কেমন সেটা আমার ভীষণ বুঝতে ইচ্ছে করে। যে মানুষটা মারা যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি যে মানুষগুলোর জীবনের অনেকটুকু জুড়ে সে মানুষটা ছিল, যেই অদৃশ্য ছায়াগুলো মাড়িয়ে তার আপনজনদের প্রতিনিয়ত বাস করতে হয়, সেই সুখের সাথে আপোষ করা মানুষগুলোর জীবন কিভাবে চলে আমার তা খুব দেখতে ইচ্ছে করে। আমার দেখতে ইচ্ছে করে পরবর্তী কখন মানুষগুলো আরেকবার তাদ

হযবরল-১

Image
আমার এই অতি আধুনিক শহরে শীতের দিনগুলো খুব ছোট। বিকেল চারটে বাজতে না বাজতেই নিঝুম অন্ধকার নামে৷ ক্লাস শেষ করে ট্রেন স্টেশনে গিয়ে দাড়াই অলস পায়ে। মহীনের ঘোড়াগুলি বোধহয় এই স্টেশনগুলো দেখলে পরবর্তী গানের রসদ খুজে পেতো সহজেই। সময়ের সাথে পাল্লা দেয়ার কি এক অবিশ্রান্ত চেষ্টা সবার। নাগরিক রোবটের মত ট্রেনগুলো সামনে এসে দাঁড়ায়, ভেড়ার পালের মত কিম্ভুতকিমাকার মাংসপিন্ড চড়ে বসে। সাঁইই করে ছুটে যায় গন্তব্যস্থলে। এই ছোটার কোন বিরতি নেই, শুধু ব্যস্ততা আছে। জীবনান্দের মত আমি কোন অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে হেটে চলা মানুষ দেখি না, যে যেখানে যেতে চায় সেখানে হেটে যাবার  মত অবসর তার আছে। অবসর এখানে বিলাসিতা, তাই উন্নতি তুংগে, আর সুখ তলানিতে৷ প্রথম প্রথম যখন এসেছিলাম, তাদের অপরিচিতদের সম্বোধন করা দেখে ভেবেছিলাম, বাহ খুব বুঝি অসাধারণ জাতি। কিন্তু প্রতিবারের মতই বুঝলাম, প্রথম দেখায় যা সুন্দর লাগে তার সৌন্দর্য বেলাশেষে খুব অল্পই অবশিষ্ট থাকে। এখন বুঝি এই খুব সুন্দরের দেশটাও এক অদ্ভুত বিষণ্ণ দেশ, শুধু তারা তা জানে না। আলো তার নিচে ছায়া খুব একটা দেখতে পায় না। সেটাই স্বাভাবিক।