হসন্ত-২
হসন্ত
গতকাল রাতে আমার জানালা গলে অদ্ভুত জোছনা এসেছিল, জানো? আমার কড়া নিহিলিজমের জোছনা নয়, তোমার হুমায়ুন আহমেদীয় ফিনিক ফোঁটা জোছনা। এই যে ইদানীং আমার অযথাই নাক টানার এক বিচ্ছিরি স্বভাব হয়েছে, তার কারণে চাঁদখানা আমাকে ডাকার আগে আমি তাকে খেয়াল করিনি। চাঁদ দেখার একটা বাঁধাধরা নিয়ম আছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত চোখ না জ্বলে ততক্ষন পর্যন্ত ঠায় তাকিয়ে থাকতে হবে, এরপর যখন চোখে বিষম জ্বলুনি হবে তখন শুধু সৌন্দর্যের সামনে মাথা নামিয়ে রাখতে হয়।
এমন এক মাথা নোয়ানো মুহুর্তে তুমি ফোন দিয়েছিলে। ধরিনি। ভালোবাসা আর সৌন্দর্য সমানুপাতিক, দুটোকে এক করতে হয় না। কিন্তু দিব্যি দিয়ে বলছি, তোমার কথাই ভেবেছি। এই যে এত অল্প সময়ে আকাশসমান পিছুটান তৈরি হয়ে গেলো সে দায় কার? অবশ্যই তোমার। শাহানা বাজপেয়ীর মত করে বললে, 'আমি তো ছিলাম বেশ চুপিসারে.....'। আমার সেই স্বপ্নভেজা মাটিতে নীলচে আলো জ্বেলে আসার কি খুব প্রয়োজন ছিল? কেউ যে নিজেকে নিজের কাছে বন্ধক রেখে অন্য কাওকে সবকিছু একাকার করে ভালোবাসতে পারে সেই বিচ্ছিরি প্রমাণটা করার খুব প্রয়োজন ছিল? একটা হিসাব তো কষেই নিয়েছিলাম নিজের মত করে, একটা নিজের জগত, একটা বাইরের জগত। আলাদা করবার বেশ কিছু কৌশলও রপ্ত করে ফেলেছিলাম, কিন্তু তুমি মাইরি বড্ড বাগড়া দিয়ে ফেললে! পা টিপেটিপে নিথর জীবনে ঢুকে যে কাদা আর পাথরের গল্পগুলো নস্যাৎ করে দিলে, রেড ওয়াইন আর গ্রীণ সিগন্যালের শহরে যে অট্টালিকাগুলোকে কুঁড়েঘর বানিয়ে ফেললে, সবগুলো ল্যাম্পপোস্টে সোডিয়াম বাতি জ্বেলে যে মায়া আর বিষণ্ণতা দিয়ে চারদিক ধুম্রজালের মত পেঁচিয়ে ফেললে, এখন কি হবে? এত বুকের পাটা কেন তোমার? ভালোবেসে শুভঙ্করের এমন সাহস হয়েছিল গেলো জন্মে, হারিয়ে গেছে বেঘোরে, যদিও প্রেমের তিলক পরিয়ে গেছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে।
গতকাল একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল, শোনার পর থেকে আমার কলিজাটা আর জায়গামত নেই, কাঁপতে কাঁপতে তার স্থান থেকে বের হয়ে আসার জোগাড় হয়েছে। যেদিন আমার ফেলে দেয়া টিপটা মাটি থেকে কুড়িয়ে নিজের গেঞ্জির ভেতর লুকিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর আবার পরিয়ে দিয়েছিলে, সেদিন থেকে শেষ হয়ে গেছি। ভেবেছিলেম, ক্ষতি খুব বেশি হয়নি, সোডিয়াম বাতিগুলোকে এলইডি লাইট দিয়ে ঢেকে গোঁজামিল দিয়ে অংকের উত্তর মিলিয়ে ফেলবো। কোন এক ক্ষমাহীন প্রান্তর জুড়ে বেঁচে থাকা হবে হয়তো, কিন্তু অন্তত নন্দিনীর মত নিঃশেষ হবো না। তারপর হুট করে কাল বোধোদয় হলো, অংকের প্রশ্ন গেছে পালটে, এর না আমি মেলানোর নিয়ম জানি, না গোঁজামিলের। মনে হচ্ছে আমি কোন এক একশ বছর পুরনো জাহাজ, মাস্তুলে ধরেছে ঘুণ, তুমি সফেদ ঢেউরাশি কি এক মধুর আক্রোশে টেনে ধরেছ, আমি ডুবছি আর ডুবছি, এক ইঞ্চি থেকে শুরু করে কয়েকশ ইঞ্চি। দম বন্ধ হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই, হয়তো মারাও গেছি, কিন্তু মৃত্যুর পর যত মুহুর্ত পর্যন্ত মস্তিষ্ক সচল থাকে ততসময় পর্যন্ত সেখানে সুখের ঘাসফড়িংং উড়ে বেড়ায়। আমার ঘোলা চোখে পান্ডুর চাঁদটা ভাসে। মধুর ঐ চাঁদটাকে কখন এলুমিনিয়াম লাগে এখন বুঝি। কি সেলুকাস!
কলকাতা থেকে ফ্রান্স, মিশর থেকে রাশিয়া কোন সাহিত্যিক চেষ্টা করেননি ভালোবাসার একটা মোটামুটি সংগা টানতে? আমিও টেনেছি গত রাতে। এই যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি জেনেও আরও ধ্বংস হতে চাওয়া, এটার নামই কি ভালোবাসা না?
ইতি
আমার দেয়া তোমার কোন
'নাম ছিল না, নাম ছিল না'
গতকাল রাতে আমার জানালা গলে অদ্ভুত জোছনা এসেছিল, জানো? আমার কড়া নিহিলিজমের জোছনা নয়, তোমার হুমায়ুন আহমেদীয় ফিনিক ফোঁটা জোছনা। এই যে ইদানীং আমার অযথাই নাক টানার এক বিচ্ছিরি স্বভাব হয়েছে, তার কারণে চাঁদখানা আমাকে ডাকার আগে আমি তাকে খেয়াল করিনি। চাঁদ দেখার একটা বাঁধাধরা নিয়ম আছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত চোখ না জ্বলে ততক্ষন পর্যন্ত ঠায় তাকিয়ে থাকতে হবে, এরপর যখন চোখে বিষম জ্বলুনি হবে তখন শুধু সৌন্দর্যের সামনে মাথা নামিয়ে রাখতে হয়।
এমন এক মাথা নোয়ানো মুহুর্তে তুমি ফোন দিয়েছিলে। ধরিনি। ভালোবাসা আর সৌন্দর্য সমানুপাতিক, দুটোকে এক করতে হয় না। কিন্তু দিব্যি দিয়ে বলছি, তোমার কথাই ভেবেছি। এই যে এত অল্প সময়ে আকাশসমান পিছুটান তৈরি হয়ে গেলো সে দায় কার? অবশ্যই তোমার। শাহানা বাজপেয়ীর মত করে বললে, 'আমি তো ছিলাম বেশ চুপিসারে.....'। আমার সেই স্বপ্নভেজা মাটিতে নীলচে আলো জ্বেলে আসার কি খুব প্রয়োজন ছিল? কেউ যে নিজেকে নিজের কাছে বন্ধক রেখে অন্য কাওকে সবকিছু একাকার করে ভালোবাসতে পারে সেই বিচ্ছিরি প্রমাণটা করার খুব প্রয়োজন ছিল? একটা হিসাব তো কষেই নিয়েছিলাম নিজের মত করে, একটা নিজের জগত, একটা বাইরের জগত। আলাদা করবার বেশ কিছু কৌশলও রপ্ত করে ফেলেছিলাম, কিন্তু তুমি মাইরি বড্ড বাগড়া দিয়ে ফেললে! পা টিপেটিপে নিথর জীবনে ঢুকে যে কাদা আর পাথরের গল্পগুলো নস্যাৎ করে দিলে, রেড ওয়াইন আর গ্রীণ সিগন্যালের শহরে যে অট্টালিকাগুলোকে কুঁড়েঘর বানিয়ে ফেললে, সবগুলো ল্যাম্পপোস্টে সোডিয়াম বাতি জ্বেলে যে মায়া আর বিষণ্ণতা দিয়ে চারদিক ধুম্রজালের মত পেঁচিয়ে ফেললে, এখন কি হবে? এত বুকের পাটা কেন তোমার? ভালোবেসে শুভঙ্করের এমন সাহস হয়েছিল গেলো জন্মে, হারিয়ে গেছে বেঘোরে, যদিও প্রেমের তিলক পরিয়ে গেছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে।
গতকাল একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল, শোনার পর থেকে আমার কলিজাটা আর জায়গামত নেই, কাঁপতে কাঁপতে তার স্থান থেকে বের হয়ে আসার জোগাড় হয়েছে। যেদিন আমার ফেলে দেয়া টিপটা মাটি থেকে কুড়িয়ে নিজের গেঞ্জির ভেতর লুকিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর আবার পরিয়ে দিয়েছিলে, সেদিন থেকে শেষ হয়ে গেছি। ভেবেছিলেম, ক্ষতি খুব বেশি হয়নি, সোডিয়াম বাতিগুলোকে এলইডি লাইট দিয়ে ঢেকে গোঁজামিল দিয়ে অংকের উত্তর মিলিয়ে ফেলবো। কোন এক ক্ষমাহীন প্রান্তর জুড়ে বেঁচে থাকা হবে হয়তো, কিন্তু অন্তত নন্দিনীর মত নিঃশেষ হবো না। তারপর হুট করে কাল বোধোদয় হলো, অংকের প্রশ্ন গেছে পালটে, এর না আমি মেলানোর নিয়ম জানি, না গোঁজামিলের। মনে হচ্ছে আমি কোন এক একশ বছর পুরনো জাহাজ, মাস্তুলে ধরেছে ঘুণ, তুমি সফেদ ঢেউরাশি কি এক মধুর আক্রোশে টেনে ধরেছ, আমি ডুবছি আর ডুবছি, এক ইঞ্চি থেকে শুরু করে কয়েকশ ইঞ্চি। দম বন্ধ হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই, হয়তো মারাও গেছি, কিন্তু মৃত্যুর পর যত মুহুর্ত পর্যন্ত মস্তিষ্ক সচল থাকে ততসময় পর্যন্ত সেখানে সুখের ঘাসফড়িংং উড়ে বেড়ায়। আমার ঘোলা চোখে পান্ডুর চাঁদটা ভাসে। মধুর ঐ চাঁদটাকে কখন এলুমিনিয়াম লাগে এখন বুঝি। কি সেলুকাস!
কলকাতা থেকে ফ্রান্স, মিশর থেকে রাশিয়া কোন সাহিত্যিক চেষ্টা করেননি ভালোবাসার একটা মোটামুটি সংগা টানতে? আমিও টেনেছি গত রাতে। এই যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি জেনেও আরও ধ্বংস হতে চাওয়া, এটার নামই কি ভালোবাসা না?
ইতি
আমার দেয়া তোমার কোন
'নাম ছিল না, নাম ছিল না'
Comments
Post a Comment