কালো

ছ্যাঁত করে ওঠা রোদ, বুর্জোয়া চারচাকার শাঁই শাঁই, অজ্ঞাতনামা সারমেয়র ঘেউ ঘেউ, উচাটন সময়ের ঘোরদৌড় সবকিছু ব্যাকগ্রাউন্ড হয়ে যায় রোদ্দুরের কানে হেডফোনটা ঢুকলে।  কিছু মানুষের আস্ত জীবনটাই কি ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ড হয়ে যায়? হবে হয়তো। সাধারণত, ব্যাকগ্রাউন্ডের সামনে কোন ছবি থাকে, এসব জীবন ছবিহীন শুন্য ব্যাকগ্রাউন্ড, সবকিছু ফোকাসের বাইরে। অনেকটা প্রাত্যহিক রঙ চায়ের মত কটকটা লিকার তবুও স্বাদহীন। সারাদিনের ক্ল্যাসিকাল কর্মব্যস্ততার পর এই জানালার পাশটা কেমন অদ্ভুত টনিকের মত কাজ করে।  আচ্ছা জন্মান্ধ মানুষের কাছেও কি বিষাদের রঙ নীল? তাদের কি নিজেদেরকে প্রেমিকের পাশে লাল শাড়িতে দেখতে ইচ্ছে করে? একটু একদিকে সরে যাওয়া টিপটা ঠিক করে দেয়ার সময় মানুষটার চোখের মুগ্ধতা বোঝে? রোদ্দুর বোঝে না। তার পৃথিবীতে একটাই রঙ। একদিন মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, মা আমি যে সব কিছু যেই রঙ দেখি সেটা কি রঙ? মা বলেছিল কালো। সেই থেকে রোদ্দুরের সবকিছুই কালো। তার অভিমানের রঙ কালো, বিষাদের রঙ কালো, আনন্দের রঙ কালো, উচ্ছ্বাসের রঙটাও কালো। শুনে শুনে সে বুঝেছে আকাশ নীল হয়, বেদনাও। রক্ত লাল হয়, কষ্টও। মেঘ সাদা হয়, শুভ্রতাও। বসন্ত রঙিন হয়, রংধনুও। জীবন ধূসর হয়, অনেকটা তার চেনা কালোর কাছাকাছি। রোদ্দুরের খুব রংধনু খেতে ইচ্ছে হয়। মনে হয় জানালার কার্নিশে ধোঁয়া ওঠা এক মগ রংধনু নিয়ে নিস্তব্ধ বসে থাকলে বেশ হতো। অথবা মেঘের মাঝে শীতল পাটি বিছিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে পারলে খুব আরাম লাগতো। বৃষ্টি বেয়ে আকাশে ওঠা যেত কিংবা জলপ্রপাতের মাঝে ঠায় দাড়িয়ে থাকা যেত নিমগ্ন বাউলের মত? ধুর বোকা! এসবও বুঝি হয়? তুই একটা আস্ত পাগল! মাথার ভেতর বাইরে থেকে ঠেসে দেয়া একরাশ ভাবনা কথা কয়ে ওঠে। জন্মান্ধ রোদ্দুরের এই কার্নিশে সব হয়! আকাশের তারাগুলো রোদ্দুরের কানে মিটমিট করে জ্বলে, মগভর্তি রংধনু খাবার ফাঁকে তার সামনেই দুটো দাঁড়কাক সাংসারিক হিসাব করে, ইন্দ্রানী সেনের গান গুনগুন করতে করতেই মেঘ নেমে আসে রোদ্দুরের পাশে। বালিশটা হাতে নিয়ে রোদ্দুর মেঘের মাঝে শুয়ে পড়ে। চোখ খুলে দেখে কালো আকাশ, কালো বৃষ্টি, কালো বাতাস, কালো পাখি। কালো রঙ এর সুখ খেলা করে রোদ্দুরের চোখে মুখে।  

Comments

Popular posts from this blog

হসন্ত-২

অচেনা সিম্ফোনি

তোমরা বরং “বংশোদ্ভূত”ই থাকো!