"ওপারে থাকবে তুমি"

আমি যখনই দেখি ফেসবুকে কেউ কারো মৃত্যু সংবাদ দিচ্ছে, আমি মানুষটাকে ফেসবুকে খুজি। আমি হয়তো চিনিও না, আমি তাও খুজি। খুজে খুজে তার কাছের মানুষদের বের করি। আমি তার কাছের মানুষদের স্টক করি। আমার কাছে অন্তত ৬-৭ জন বাবা-মায়ের লিস্ট আছে যাদের সন্তান মারা গেছে, বিয়ের পরদিন সকালে মারা গেছে এমন নববধূ আছে, ৯ বছর প্রেম করে বিয়ের ১ বছরের মাথায় ক্যান্সারে মারা যাওয়া স্ত্রীর স্বামী আছে, একই সাথে বড় হওয়া ভাইয়ের মত বেস্ট ফ্রেন্ড পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার পর ভেঙে পড়া বন্ধু আছে, একই গাড়িতে এক্সিডেন্ট করে পাশের সিটে বসে থাকা মারা যাওয়া মেয়েটার বোন আছে, ২ মাস আইসিইউ-সিসিইউতে ভুগে বিদায় নেয়া লোকটার মেয়ে আছে। আমি এদের প্রতিটা মানুষের প্রোফাইল মাসে অন্তত একবার হলেও ঘাটি। 

মৃত্যু ব্যাপারটা কেমন সেটা আমার ভীষণ বুঝতে ইচ্ছে করে। যে মানুষটা মারা যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি যে মানুষগুলোর জীবনের অনেকটুকু জুড়ে সে মানুষটা ছিল, যেই অদৃশ্য ছায়াগুলো মাড়িয়ে তার আপনজনদের প্রতিনিয়ত বাস করতে হয়, সেই সুখের সাথে আপোষ করা মানুষগুলোর জীবন কিভাবে চলে আমার তা খুব দেখতে ইচ্ছে করে। আমার দেখতে ইচ্ছে করে পরবর্তী কখন মানুষগুলো আরেকবার তাদের হাসিখুশি একটা ছবি ফেসবুকে দেয়, আরেকবার কখন উচ্ছল হয়ে একটা খুশির সংবাদ দেয়। 

আমি এখন পর্যন্ত কাওকে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে দেখিনি। তাদের সুখের কাজেও মৃত মানুষটার ছায়া থাকে, বিশাল অর্জনেও হারানো আপন মানুষটার জন্য আক্ষেপ থাকে, প্রচন্ড উচ্ছলতার মাঝেও বদলে যাওয়ার কষ্ট থাকে। প্রত্যেকেই প্রতিনিয়ত, নিয়মিতভাবে নিজের মানুষগুলোর স্মৃতি হাতড়ায়, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে। 

আমি এখনও মানুষগুলোর প্রোফাইল ঘেঁটে যাই। দেখি দিনের বেলা বিপত্নীক মানুষটা হেসে খেলে জন্মদিন পালন করে বন্ধুদের সাথে, রাতের বেলা Saturn এর Sleeping at Last গানটা শেয়ার দেয়। বয়স্ক বাবারা জানে না কিভাবে কি শেয়ার দিতে হয়। নিজের মৃত ছেলের ছবিকে প্রোফাইল পিকচার বানিয়ে কাটিয়ে দেয় বছর। দুই বছর আগে বিধবা হওয়া মেয়েটা সেজেগুজে বান্ধবীর বিয়ে খেয়ে এসে তার বিয়ের ছবিগুলোকে রঙ্গিন থেকে সাদাকালো করে আপলোড দেয়। 

আমি এখনও মানুষগুলোর প্রোফাইল ঘাঁটি। আমি এক অদ্ভুত আকাঙ্খা নিয়ে আছি, মানুষগুলো কোন একদিন পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।  আমি এক অসম্ভব অপেক্ষা নিয়ে আছি, মানুষগুলোর মনের দাড়িপাল্লায় সুখের পাশটা দুঃখকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একদিন ভারি হয়ে যাবে... 



Comments

Popular posts from this blog

হসন্ত-২

অচেনা সিম্ফোনি

তোমরা বরং “বংশোদ্ভূত”ই থাকো!