Posts

Showing posts from May, 2017

সভ্যতা জরাগ্রস্ত ভাত কিংবা ডালের হিসেব

বাংলা সাহিত্যে ভীষণ বৃষ্টি আর রোদের উদাহরণ দিতে সবসময় কাকের ব্যবহার হয় কেন? তৃষ্ণার্ত কাকের মতন কিংবা কাকভেজা! কাক বোধহয় এই বাংলার সাহিত্যাকাশে পাখি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি! সে যাই হোক। আপাতত আমি কাক-গরম অবস্থায় সেদ্ধ হচ্ছি আর মনেপ্রাণে একটা ভালো খাবারের দোকান খুঁজছি।  দলবেঁধে সকাল বেলা উদ্দেশ্যহীনভাবে চলে এসেছি সোনারগাঁও পানাম সিটিতে। একদম মাঝারি ধরণের অনেকগুলো জমিদার বাড়ি আর উদার সূর্যের আপ্যায়নে অতিশয় আহ্লাদিত হয়ে যখন পেটপূজার রসদ খুঁজছি সেই মুহূর্তে একজন দোকানদার যেচে এসে একটা দোকান দেখিয়ে দিলেন। দোকানের সুনাম এজন্য যে এখানে ঘরের রান্না পাওয়া যায়। আর উপায় না পেয়ে সেখানেই বসে গেলাম উদরপুর্তি করতে। ইটকাঠ পাথরের শহরের গ্যাসের চুলার রসালো খাবারের মাঝে ভুলেই গিয়েছিলাম লাকড়ির চুলায় রান্না অন্যরকম হয়। সেই রকমটার বর্ণনা আমার কলম দিয়ে ঠিক জমে উঠবে না, জমাতে হলে হয় সেকালের রবিবাবুকে লাগবে না হয় একালের সৈয়দ মুজতবা আলীকে। সেই ভুলে যাওয়া খাবার পেটে চালান করে দিয়ে যখন বিল দিতে গেলাম তখন বৃদ্ধ মালিক আমাদের ডালের দাম রাখলেন না। কেন জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, "আপনেগো যেই ভাত দিসি সেইগুলান তো পু

হুট করে মারা যেতে চাই

আমি একদিন হুট করে মারা যেতে চাই। যাতে আমার সাথে এক আকাশ অসমাপ্ত কথোপকথন থেকে যায় আমাকে না বলা শব্দগুলো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাতে কারো বুকে শেলের মত বিঁধে থাকে, আমার সাথে শেষ না করা ঝগড়াটা যেন হিরোশিমার বদলে ঝুম বৃষ্টি হয়ে নামে, আমার ফেলে আসা আড্ডার ক্যাফেটা যাতে পরিণত হয় আধুনিক কফি হাউজে। আমি একদিন হুট করে মারা যেতে চাই। আমার ওপর ধরে রাখা পাহাড়সম অভিমানগুলো যাতে হুড়মুড় করে ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যাতে আমার সাথে করা অত্যাচারগুলো প্রতি রাতে কারো ঘরে কষ্টপোকা হয়ে উড়ে আসে, যাতে আমার আজন্ম আদরে লালিত সকল 'যদি' এবং 'হয়তোবা' অনাকাঙ্খিত অবসরে যেতে পারে। আমি একদিন হুট করে মারা যেতে চাই। যাতে আমার জন্য কয়েক বুক হাহাকার জন্ম নেয়। আমার বিগত প্রেমিকের বুকের অবশ অনুভূতিগুলো যেন ভয়ংকর সরীসৃপের মতন নড়ে ওঠে, যাতে আমার তথাকথিত আপন মানুষদের মাঝে এক ব্ল্যাকহোল সমান অপ্রাপ্তি জমা হয়। আমি একদিন হুট করে মারা যেতে চাই। কারণ মানুষ সুখ নয়, দুঃখ লালনে বাঁচে, কারণ মানুষ পূর্ণতা নয়, আফসোস মনে রাখে।

সময়ের আফসোস

আমি প্রতিদিন সকালে ভার্সিটি যাওয়ার সময় গাড়ি যখন বিজয় সরণী মোড়ে থামে , ঠিক সেই সময় আমার ড্রাইভারের একটা ফোন আসে। আমার ড্রাইভার সাধারণত গাড়িতে ফোন ধরে না , কিন্তু এই ফোন ধরে। খুব আগ্রহ নিয়ে ধরে। ঐ পাশ থেকে একটা আবছা চিৎকার ভেসে আসে-আব্বু! ড্রাইভার-হ্যা আব্বু ? ওপাশ থেকে কিছু ইনিয়ে বিনিয়ে কথা। ড্রাইভার-স্কুলে যাইতেসো আম্মা ? অপর পাশে হ্যা বা না কিছুই আমি শুনতে পাই না। ড্রাইভার: আইচ্ছা। রাস্তার এক সাইড দি যাইও। দেখি দেখি যাইও কেমন ? আব্বু গাড়ি চালাইয়ের। রাখি কেমন ? আমার ড্রাইভার খুব লজ্জা লজ্জা স্বরে বলে আপা আমার বড় মেয়ে। এই বচ্ছর প্রথম স্কুলে জাইতেসে। রওনা দেওনের আগে আমারে একবার ফোন দেয়। না ধইরলে খুব মন খারাপ করে। এই বলে গাড়ি চালানোয় মনযোগ দেয় সে। আমি মানুষটার ঠোঁটের কোণায় তাকিয়ে থাকি। আলতো তৃপ্তির হাসিটা মোছে না তার মুখ থেকে। আজকাল আমি অনেকটা অপেক্ষা করেই থাকি মেয়েটার ফোনের জন্য। পুরো কথোপকথনে আমি ' আব্বু ' ছাড়া বিশেষ কিছুই শুনতে পাই না। কিন্তু পুরো সময় জুড়ে আমাকে ঘিরে থাকে এক অদ্ভুত ইথার-ভালোবাসা। বাবা-কন্যার ভালোবাসার এই রূপটুকু দেখে আমার কি আফসোস হয় কোন? নাহ।