ফ্যাকাশে ধুলো
কানাবাবা,
তোর আর আমার এই রঙিন ধুলোর শহরটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছে জানিস? এই শহরের বিষাক্ত বাতাসের প্রতি বুননে তোর হাতছানি। এই বেহায়া রাজপথের ভাঙাচোরা কংক্রিটের ফাঁকে একেবারে তরতাজা রক্ত মাংসের স্মৃতিরা কেমন জানি কুকড়ে গেছে।
আমি তবুও হাটি, তোকে ছাড়া এক কদম না দেয়ার প্রতিজ্ঞাগুলো এখন আর কানে শঙ্খধ্বনির মত বেজে ওঠে না, ওরা কানের দেয়ালে লেপ্টে গেছে, প্রাচীন শেকড়ের মতন। এখন তোকে ছাড়াই হাজার কদম হেঁটে ফেলেছি, রাস্তাগুলোও মসৃণ আগের চেয়ে। কিন্তু যেই এই হতভাগা শহরে একটু জলধারা বয়, সেই হালকা হিম হালকা ভ্যাপসা বাতাসে আমার বিদ্রোহী পায়ের সামনে নিথর রাস্তাগুলো যেন প্রতিবাদ করে ওঠে। ডিজেলপোড়া গন্ধ আমাকে ছোয় না, দূর থেকে ভেসে আসা আগরবাতির গন্ধ আমাকে ঘিরে ধরে। সন্ধানী মন উৎকণ্ঠা দেখায় না, এই মৃত সুবাসের উৎস জানতে ব্যাকুল হয় না।
আমি আলতো অন্ধকার দেখি, তোর আর আমার অন্ধকার। এমন হালকা সন্ধ্যা হলে, পাশের গলিয়ে নিঝুম নীরবতা নামে। এই শহর একসময় নরক ছিল জানিস? প্রতি পদচ্ছাপে মনে হতো কার ছায়াকে মাড়িয়ে চলছিলাম। সে ছায়ার মৃত্যু ঘটেছে, পা হারিয়ে সেই সত্তাও আজ পঙ্গু। যে শহরে তুমি নেমে এসেছিলে সর্বাঙ্গীণ জুড়ে, সে শহরে বিষাদের কাকতাড়ুয়াদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। থাকবারই কথা। বিষাদ গেলবার টনিক গিলতে গিলতে কখন যেন নিজের জীবনখানাই এক টাকা দামের চকলেটের মত টুপ করে গিলে ফেলেছি।
আমি চেষ্টা করেছিলাম, ঐ বিচ্ছিরি দেখতে কাকতাড়ুয়াদের ফাঁকি দিয়ে পালাতে। ঐ ঝলসানো রোদ, ট্রাফিকের হুংকার, পিচঢালা রাস্তায় নাগরিক হর্ষধ্বনি, কাঁচের দেয়ালের ওপাশে কর্পোরেট শীৎকার কিংবা পরিপাটি রেস্তোরায় মেকি বৈরাগ্য সব কিছু টেনে ধরে আমাকে, পিছুটানের চেয়ে জোরে। আমি বসে পড়ি, এই রোদ তাতানো রাস্তায়, তোমার আমার রাস্তায়। আমার ভেতরে দুমদাম শব্দে কষ্টেরা ডামাডোল বাজায় না, বরঞ্চ হৃদপিন্ডের করাঘাত ধীরলয়ে চলে, ক্লান্তির ঘায়ে।
আমাদের তো আলাদা আলাদা খাঁচায় একে অপরের জীবন হয়ে বাচবার কথা ছিল, আমাদের তো অবসরের দীর্ঘশ্বাস হয়ে সন্ধি করবার কথা ছিল, আমাদের তো জীবনের সাথে লেনাদেনা চুকিয়ে মাঠের ওপারে দেখা করার কথা ছিল, কোন এক পূর্ণিমা তিথিতে।
শেষমেষ কি আমরা মৃত্যুর কাছেও ফুরিয়ে গেলাম?
ইতি,
তোর 'কিন্তু'
Comments
Post a Comment