অনধিকারের কাব্য

প্রিয় 'কানাবাবা'',
সাধারণত শেষের পরে কিছু বাকি থাকলে তা উচ্ছিষ্টের তালিকায় যায়। কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে শেষের অবশিষ্ট যা থাকে, তা মহাকাব্যের খাতায় নাম লেখায়, জানো তো? আমরা বোধহয় অবশিষ্টের অংশীদার হয়ে গেছি। সেদিন মাঝরাতে তোকে চ্যাটে নক দিয়েছিলাম। খুব কবিতা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। বিধি বাম! তুই ব্যস্ত। অভিযোগ নেই। ব্যস্ত হওয়ারই কথা। আমার ইচ্ছের কথাটুকুও আমার গলা পর্যন্ত আটকে থাকলো। থাকারই কথা। কবিতা শোনানোর আবদারগুলোতে  এখন আর অধিকারের সুর নেই। অনুভূতিগুলো এক পা এগোয় তো দশ পা পেছোয়। মনে আছে, এক সময় কবিতা আবৃত্তির আগে স্বর ঠিক আছে কিনা জানার জন্য এক কবিতা বারবার শুনতে হতো আমাকে? মাঝে মাঝে কিছুটা বিরক্ত কি হতাম? হয়তোবা। কিন্তু তাতে শোনার কিংবা শোনানোর আগ্রহ কিছুতেই ভাটা পড়তো না। এই অধিকারেই বোধহয় সম্পর্ক চলে। মনে আছে, আমাদের মধ্যে কেমন ভীষণ প্রতিযোগিতা চলতো? কে কার চেয়ে কত বেশি ক্রিয়েটিভ তার প্রতিযোগিতা। কেউ যাতে না হারে আবার কেউ যাতে না জেতে, সেই খেয়াল রেখে তুমুল প্রতিযোগিতা। তোর ইংরেজির বাবুগিরি, আর আমার বঙ্কিমীয় বাংলার নাক উঁচু স্বভাব, খুব মিলেছিল কিন্তু কি বলিস? আগা গোড়া বিজ্ঞানের ছাত্রী আমি, কিন্তু ইংরেজি সাহিত্যের সকল নভেল আর দর্শন আমার মাথায় অনেকটাই পুরে দিয়েছিলি তুই, পরীক্ষার আগে পড়ার সাহায্যের বাহানায়। মানুষ কেন বলতো আমরা দুজন দুই মেরুর মানুষ আমি বুঝি না। তারা বোধহয় ভুলে যায় পৃথিবীটা গোল, যতোই দুই মেরুর মানুষ হই না কেন, হাঁটা শুরু করলে দুজন আবার একই জায়গায় এসে মিলবো, যেমনটা বলে গিয়েছিলেন জীবনানন্দ আরোও বহু বছর আগে। তোর অসংখ্য গোঁজামিল দেয়া নাটক-মুভির স্ক্রিপ্ট আমার ছোট ছোট যুক্তি দিয়ে জোড়া দেয়ার কাজটা কি আমাদের প্রতিযোগিতার অংশ ছিল? হবে হয়তো। কিন্তু অহংবোধ ছিল না তাতে লেশমাত্র, অনুপ্রেরণা ছিল। নিজের কাছে নিজের হারানোর যেমন কিছু নেই, আমাদের নিজেদের মাঝেও ব্যাপারটা তাই ছিল। আজ কোন প্রতিযোগিতা নেই, সৃজনশীলতা নিয়ে আমাদের এখন আর খুনসুটি লাগে না।  আফসোস, এত ক্রিয়েটিভিটি, এত সাফল্য দিয়েও কোথায় যেন শুন্যতার বাতাস বয়। কত বড় বড় বোদ্ধা এখন কাজের প্রশংসা করেন, কিন্তু তোর ঐ সস্তা প্রশংসা না শুনলে উচ্চমার্গীয় সাহিত্যও বস্তাপচা মনে হয়। গভীর রাতে যখন রাজ্যের কাজ মাথায় নিয়ে আরক্ত চোখে ল্যাপটপ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকি, তখন মনে হয়, সেই কপট বিরক্তির মুহূর্ত থেকে কিছু কবিতা আলগোছে রেখে দিতে পারতাম। তাহলে বোধহয় এই বুর্জোয়া রাতের মাঝে অনধিকারের হাহাকারটা এভাবে আকড়ে ধরতো না।
ইতি তোর 'কিন্তু'

Comments

  1. কত বড় বড় বোদ্ধা এখন কাজের প্রশংসা করেন, কিন্তু তোর ঐ সস্তা প্রশংসা না শুনলে উচ্চমার্গীয় সাহিত্যও বস্তাপচা মনে হয় । ভাল ছিল লিখা টা।

    ReplyDelete
  2. কত বড় বড় বোদ্ধা এখন কাজের প্রশংসা করেন, কিন্তু তোর ঐ সস্তা প্রশংসা না শুনলে উচ্চমার্গীয় সাহিত্যও বস্তাপচা মনে হয় । ভাল ছিল লিখা টা।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

হসন্ত-২

অচেনা সিম্ফোনি

তোমরা বরং “বংশোদ্ভূত”ই থাকো!