Posts

Showing posts from 2018

হযবরল-১

Image
আমার এই অতি আধুনিক শহরে শীতের দিনগুলো খুব ছোট। বিকেল চারটে বাজতে না বাজতেই নিঝুম অন্ধকার নামে৷ ক্লাস শেষ করে ট্রেন স্টেশনে গিয়ে দাড়াই অলস পায়ে। মহীনের ঘোড়াগুলি বোধহয় এই স্টেশনগুলো দেখলে পরবর্তী গানের রসদ খুজে পেতো সহজেই। সময়ের সাথে পাল্লা দেয়ার কি এক অবিশ্রান্ত চেষ্টা সবার। নাগরিক রোবটের মত ট্রেনগুলো সামনে এসে দাঁড়ায়, ভেড়ার পালের মত কিম্ভুতকিমাকার মাংসপিন্ড চড়ে বসে। সাঁইই করে ছুটে যায় গন্তব্যস্থলে। এই ছোটার কোন বিরতি নেই, শুধু ব্যস্ততা আছে। জীবনান্দের মত আমি কোন অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে হেটে চলা মানুষ দেখি না, যে যেখানে যেতে চায় সেখানে হেটে যাবার  মত অবসর তার আছে। অবসর এখানে বিলাসিতা, তাই উন্নতি তুংগে, আর সুখ তলানিতে৷ প্রথম প্রথম যখন এসেছিলাম, তাদের অপরিচিতদের সম্বোধন করা দেখে ভেবেছিলাম, বাহ খুব বুঝি অসাধারণ জাতি। কিন্তু প্রতিবারের মতই বুঝলাম, প্রথম দেখায় যা সুন্দর লাগে তার সৌন্দর্য বেলাশেষে খুব অল্পই অবশিষ্ট থাকে। এখন বুঝি এই খুব সুন্দরের দেশটাও এক অদ্ভুত বিষণ্ণ দেশ, শুধু তারা তা জানে না। আলো তার নিচে ছায়া খুব একটা দেখতে পায় না। সেটাই স্বাভাবিক।

আকাশ, নুড়ি পাথর এবং সেচ্ছামৃত্যু

Image
আমি নিজেকে আস্ত আকাশ এনে দেবার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।  খয়েরী রঙা কিংবা লাল।  কিন্তু আমার আমি বেছে নিয়েছে সস্তা নুড়ি পাথর- বৈশিষ্ট্যহীন, অচল।  মানব প্রকৃতি প্রাপ্তিকে যোগ্য মনে করে না, অপ্রাপ্তির উপাসনাই এখন হাল আমলের ফ্যাশন, অধরাই নাকি মুক্তি?  আফসোস! এখন আকাশের প্রতিদ্বন্দ্বী পলকা ঐ নুড়ি পাথর।  জীবনের ফিবোনাক্কি সিরিজে  অশরীরী তর্জনী গর্জে ওঠে! ঈশ্বর, তোমার সূর্যের আলো ফ্যাকাশে কেন? ঈশ্বর নিরুত্তর... ঈশ্বর নিরুত্তেজ... ঈশ্বর নিরুপায়... আকাশটা ধূসর হতে হতে নেমে আসে  পৃথিবীর কোলে, গুটিসুটি মেরে মাথা রাখে, ঐ একটুখানি নুড়ির বুকে।  একটা খয়েরী আকাশের প্রতিশ্রুতি ছিল  আমার নিজের কাছে।  ছাইরঙা প্যাঁচাটাকে আকাশ ধার দিয়েছে তার রঙধনু, প্যাঁচা উজাড় করে দিয়েছে তার ধূসরতা। ফ্যাকাশে যার ধর্ম, তাকে কি রঙের ছোয়া পোষায়? এ কেমন সেচ্ছামৃত্যু তার? পাখি বিস্মৃত হয়েছে গত জন্মের অনুধাবন। মৃত্যুর চেষ্টায় যতটা বিষাদ থাকে, মৃত্যুতে তা উবে যায়।

ফ্যাকাশে ধুলো

Image
কানাবাবা, তোর আর আমার এই রঙিন ধুলোর শহরটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছে জানিস? এই শহরের বিষাক্ত বাতাসের প্রতি বুননে তোর হাতছানি। এই বেহায়া রাজপথের ভাঙাচোরা কংক্রিটের ফাঁকে একেবারে তরতাজা রক্ত মাংসের স্মৃতিরা কেমন জানি কুকড়ে গেছে। আমি তবুও হাটি, তোকে ছাড়া এক কদম না দেয়ার প্রতিজ্ঞাগুলো এখন আর কানে শঙ্খধ্বনির মত বেজে ওঠে না, ওরা কানের দেয়ালে লেপ্টে গেছে, প্রাচীন শেকড়ের মতন। এখন তোকে ছাড়াই হাজার কদম হেঁটে ফেলেছি, রাস্তাগুলোও মসৃণ আগের চেয়ে। কিন্তু যেই এই হতভাগা শহরে একটু জলধারা বয়, সেই হালকা হিম হালকা ভ্যাপসা বাতাসে আমার বিদ্রোহী পায়ের সামনে নিথর রাস্তাগুলো যেন প্রতিবাদ করে ওঠে। ডিজেলপোড়া গন্ধ আমাকে ছোয় না, দূর থেকে ভেসে আসা আগরবাতির গন্ধ আমাকে ঘিরে ধরে। সন্ধানী মন উৎকণ্ঠা দেখায় না, এই মৃত সুবাসের উৎস জানতে ব্যাকুল হয় না। আমি আলতো অন্ধকার দেখি, তোর আর আমার অন্ধকার। এমন হালকা সন্ধ্যা হলে, পাশের গলিয়ে নিঝুম নীরবতা নামে। এই শহর একসময় নরক ছিল জানিস? প্রতি পদচ্ছাপে মনে হতো কার ছায়াকে মাড়িয়ে চলছিলাম। সে ছায়ার মৃত্যু ঘটেছে, পা হারিয়ে সেই সত্তাও আজ পঙ্গু। যে শহরে তুমি নেমে এসেছিলে সর্বাঙ্গীণ জ

হসন্ত-২

Image
হসন্ত গতকাল রাতে আমার জানালা গলে অদ্ভুত জোছনা এসেছিল, জানো? আমার কড়া নিহিলিজমের জোছনা নয়, তোমার হুমায়ুন আহমেদীয় ফিনিক ফোঁটা জোছনা। এই যে ইদানীং আমার অযথাই নাক টানার এক বিচ্ছিরি স্বভাব হয়েছে, তার কারণে চাঁদখানা আমাকে ডাকার আগে আমি তাকে খেয়াল করিনি। চাঁদ দেখার একটা বাঁধাধরা নিয়ম আছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত চোখ না জ্বলে ততক্ষন পর্যন্ত ঠায় তাকিয়ে থাকতে হবে, এরপর যখন চোখে বিষম জ্বলুনি হবে তখন শুধু সৌন্দর্যের সামনে মাথা নামিয়ে রাখতে হয়। এমন এক মাথা নোয়ানো মুহুর্তে তুমি ফোন দিয়েছিলে। ধরিনি। ভালোবাসা আর সৌন্দর্য সমানুপাতিক, দুটোকে এক করতে হয় না। কিন্তু দিব্যি দিয়ে বলছি, তোমার কথাই ভেবেছি। এই যে এত অল্প সময়ে আকাশসমান পিছুটান তৈরি হয়ে গেলো সে দায় কার? অবশ্যই তোমার। শাহানা বাজপেয়ীর মত করে বললে, 'আমি তো ছিলাম বেশ চুপিসারে.....'। আমার সেই স্বপ্নভেজা মাটিতে নীলচে আলো জ্বেলে আসার কি খুব প্রয়োজন ছিল? কেউ যে নিজেকে নিজের কাছে বন্ধক রেখে অন্য কাওকে সবকিছু একাকার করে ভালোবাসতে পারে সেই বিচ্ছিরি প্রমাণটা করার খুব প্রয়োজন ছিল? একটা হিসাব তো কষেই নিয়েছিলাম নিজের মত করে, একটা নিজের জগত, একটা বাইরের জগত

অচেনা সিম্ফোনি

Image
আমার সকল 'যদি' কিংবা 'হয়তোবা' খুব শীঘ্রই, অঘোষিত অবসরে যাবে। একটা খুব অচেনা সিম্ফোনি ছেড়ে দেবো- আধুনিক বিষযন্ত্রে। বিউগল বাজবে প্রেমিক! লাশকাটা ঘরে ব্যাকগ্রাউন্ডে.... রংচটা ঘড়িটা ভুল সময়ে ঠিক মুহুর্ত জানান দেবে। নৈশব্দ ভাঙবে পুরনো রক্তের টুপটাপে। তাড়ি খেয়ে চোখ লাল করা ডোম অপেক্ষায় থাকবে দাবার মাঠে পরাজিত সর্বশেষ লাশের.... জীবিত আর মৃতের মাঝের তফাৎ কদ্দুর? এক নিশ্বাস সমান। যে কৃষ্ণচূড়ার লোভে গৃহত্যাগ সেই ফুল নতজানু হয়ে হবে পিঙ্গলবর্ণ... যে স্বপ্নেরা ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়েছিল শেয়ালরূপে তারা পাবে অমরত্ব, প্রেমিক! হেমলকের পেয়ালা জমা রইবে ওয়াইনের সেলারে। প্রতিজ্ঞারা মাথা হেট করে চলবে ছায়াপথের কিনার ঘেসে, অজ্ঞাতনামা ফুলের অবৈধ আলিঙ্গনে... পোস্টমর্টেম বেডে এফোঁড়ওফোঁড় বৃথা আস্ফালন নীলেদের... কোথাও এতটুকু সন্দেহ থাকবে না, শুধু থাকবে, নিশ্চয়তা- পাহাড়সম শীতলতার। নিউরনে নিউরনে আবদ্ধতা ফুরোবে, প্রেমিক! থমকে থমকে চলা হৃৎপিণ্ডের সাথে শুধু ঐ ভোঁতা অনুভুতিটুকু বাদে, যেখানে তোমার আমার বসতি। অতএব, চলো আমরা মারা যাই, জাতিস্মর হবার প্রতিজ্ঞা নিয়ে।

হসন্ত-১

Image
হসন্ত একটা ছায়াহীন প্রান্তর জুড়ে হেটে যাচ্ছিলাম, বহুদিন ধরে, বহুক্রোশ পথ। পলাতক আসামীর মত দিগ্বিদিক শুন্য হয়ে। কোথাও থিতু হওয়া প্রয়োজন ছিল খুব, আশ্রয়ের আশায় কখন পাথর আকড়েছিলাম, কখনো আস্ত গাছ, কখনো সমুদ্রের সামনে মেলে দিয়েছিলাম, পাহাড়ের মাঝে প্রতিধ্বনির মত ছড়িয়ে গিয়েছিলাম। তোমরা  আমাকে বাঁচানোর জন্য একটা ছাপোষা নেমন্তন্ন দিয়েছিলে বটে! কিন্তু সে নেমন্তন্ন গ্রহণ করা চলে না, তার পরতে পরতে পূর্ববর্তী আক্রোশ কিংবা অনাগত ষড়যন্ত্র। তোমাদের নগরীতে যখন ঝলমলে রোদ, আমার ঘরের মাঝে মাঘের শীত, ধোঁয়া ধোঁয়া আলতো কুয়াশা। এই সময়গুলো হাফ ধরা, পরাজিত। একটা ঘুণে ধরা সিন্দুকে স্মৃতিগুলো জমা রাখা ছিল। কাঁচপোকা হয়ে উড়ে গেছে। প্রয়োজনের জাল ভীষণ বিস্তৃত করেও তাকে ধরা যায়নি। অংশবিশেষ রয়ে গেছে, কাঙ্গালের সেটাই সম্বল। এ কবর থেকে সে কবরে ছুটে চলার মুহূর্তে হুট করে জংলী ফুলের কাঁটার মত বিঁধে গেলে, পায়ের বদলে সারা শরীরে। আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, বদলে আমি বুক ভরে শ্বাস নিলাম। কতগুলো জোনাক হলে একটা হৃৎপিণ্ড বিচ্ছুরিত আলোকউৎসের মত পথ দেখাবে, তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তুমি হেসেছিলে, একেক হাসির একেক রঙ হয়,

গরল বচন: ২

Image
মনের অস্তিত্ব নেই, তবে তার সবকিছু শরীরের ভেতরে জানান দেয় কেন? না থেকেও থাকার সর্বত্র জুড়ে থাকা? খুব অন্যায় চেষ্টা বলতে হবে! ইদানীং এই সুক্ষ ব্যাপারগুলো ধরতে পারি না, অনুভূতির দেয়ালে শ্যাওলা জমে স্যাতস্যাতে হয়ে গেছে। তবে গত রাত থেকে পারছি। কেউ একজন যেন সিরিশ কাগজ দিয়ে সবুজ রঙা শ্যাওলাগুলো তুলে ফেলেছে। তার পর তাতে লেপ্টে দিয়েছে এক আকাশ অপরাধবোধ। বিষাদদের পাখি হয়ে উড়ে যাবার কথা ছিল, কিন্তু সেগুলোও অন্তঃসারশূন্য হয়ে বৃথা ডানা ঝাপটায়। আমার দেয়াল ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আমার সামনে দিয়ে হেটে চলে সত্যের সারি, মাটি খোড়ে, কবরের। একেকটা কবর একেকটা বোবা টানেলে রূপ নেয়, দুপাশে সমান অন্ধকার, সে অন্ধকারে হাজার বছরেও চোখ সয় না। গভীর রাতে লণ্ঠন জ্বেলে আসে ডাকপিয়ন, হারানোর বার্তা নিয়ে। আচ্ছা, কার বুক বেশী ভারী হয়? যে হারিয়ে যাচ্ছে তার, নাকি যে হারিয়ে ফেলছে তার?

গরল-বচনঃ ১

Image
হসন্ত তোমাকে প্রিয় বলে সম্বোধন করলাম না, সম্বোধনে প্রেম বোঝা যায়, কিন্তু ঠিক আপন আপন লাগে না। তুমি যতটা না প্রেমিক তারচেয়ে তো বেশি আপন তাই না? তোমার উপর মাঝে মাঝে আমার ভীষণ অভিমান হয়। বর্ণহীন অভিমান। খানিকটা ছোট্ট শিশুর লাল ফুল্কিওয়ালা বেলুন কিনতে না পারার মত অভিমান। নিষ্পাপ কিন্তু দগদগে হয়ে থাকে ভেতরটা। এই অভিমানগুলো অধিকারহীন, এতে নিঃশ্বাস আছে, প্রশ্বাস নেই।  মাঝে মাঝে ভাবি, এই যে স্যাতস্যাতে আবেগ নিয়ে তোমাকে অক্টোপাসের মত জড়িয়ে আছি আষ্টেপৃষ্ঠে, গুটিয়ে নেই নিজেকে। কিন্তু তারপর বুঝি এই গুটিয়ে নেয়ার ইচ্ছেগুলো বড্ড বেশি মেরুদন্ডহীন, পরাধীন। দিনশেষে, মানুষ তার নিজের কাছেই সবচেয়ে বেশি অসহায়।   ইতি তোমার দেয়া আমার কোন, নাম ছিল না, নাম ছিল না                                                      ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সাদিয়া নূর মিথিলা 

মৌতাত

Image
তোমার অভিযোগের প্রতিটি ডানায় আমার অবয়ব সিসিফাসের মত নিজেকে আবিষ্কার করি, পাহাড়ের চূড়ায়,  পুনরাবৃত্তির শেকলে- পেছনে গোঙানির শব্দ,  দেয়ালে দেয়ালে ঘর্ষণের।  ক্যান্সার সেলের মত ইটগুলো বেড়ে ওঠে,  একটা ভাঙলে বিপরীতে দশটা...  চোখ বুজি, সাথে মনও...  কুয়াশার সকালে মুক্তোরূপী বকুল আর চিড়চিড়ে আগুনের গন্ধ-- মিলেমিশে ভীষণ মৌতাত। সৌন্দর্যের ছাই পড়ে থাকে, প্রেম শেষে বিষন্নতার মত। ছাই পোড়ালে তো ছাইই হয় বৈকি, তাতে কি দহনের জ্বালা কমে? ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সাদিয়া নূর মিথিলা 

একটি পারস্পরিক মেটামরফোসিস

Image
কালচে হয়ে যাওয়া গোলাপের পাপড়িরা জানে না, অনাগত বৃষ্টির মাঝে মিলেমিশে যায় নিকোটিনের জ্বালাতন। দুটো ব্যাকপ্যাকে খামচে থাকে সুখ, ভেতরে তামাক জ্বালেন ছফা, চশমা ঠিক করেন শাহাদুজ্জামান। কয়েক পেগ মার্টিনির বুলডোজারে কাবু কাফকা বেতাল চোখ তোলেন। চোখটা লাল হওয়ার কথা ছিল। চোখটা হলুদ। একটি পারস্পরিক মেটামরফোসিসের গল্পে পোড় খায়, আধখাওয়া চাঁদটা.........

ছদ্ম-জ্যোৎস্না

Image
তারপর, ঐ থমথমে তারাগুলো হিসেব বুঝিয়ে দিলো আসন্ন শীতের, বিগত জ্যোৎস্নার কিংবা, সরীসৃপ চামড়া বয়ে চলমান বৃষ্টিবিন্দুর। আজকাল, দিনজুড়ে শুধু বেওয়ারিশ ফর্দ বানাই, অমুক নীতি আর তমুক নৈতিকতার- নিউরনের ভেতরের শব্দকোষ হয়ে ওঠে আমগ্ন ভিসুভিয়াস গলে গলে পড়ে আদর্শ-লিপি। শুনলাম, চাঁদ দেখে ইদানীং পূর্ণিমা বোঝা যায় না?