Posts

Showing posts from 2017

অসমাপ্ত

বছরের অর্ধেক দিন মদ্যপ আর অর্ধেক দিন ব্যস্ত বাবার সাথে এক ছাদের নিচে থেকেও দিনের পর দিন দেখা হয় না কন্যার। পৃথক অনলে পোড় খাওয়া দুজন মানুষ একে অপরের ছায়া না মাড়িয়ে কাটায়। হৃদপিণ্ডের সাথে রফা করার ব্যাপারটা বোধহয় এতো সহজ নয়। তবুও কিভাবে যেন একজনের অসুস্থতা দুজনকে পাশাপাশি দাড় করিয়ে দেয়। কাছে আসার সাহসী গল্পগুলো কখন যেন দুঃসাহসী হয়ে ওঠে।

কালো

Image
ছ্যাঁত করে ওঠা রোদ, বুর্জোয়া চারচাকার শাঁই শাঁই, অজ্ঞাতনামা সারমেয়র ঘেউ ঘেউ, উচাটন সময়ের ঘোরদৌড় সবকিছু ব্যাকগ্রাউন্ড হয়ে যায় রোদ্দুরের কানে হেডফোনটা ঢুকলে।  কিছু মানুষের আস্ত জীবনটাই কি ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ড হয়ে যায়? হবে হয়তো। সাধারণত, ব্যাকগ্রাউন্ডের সামনে কোন ছবি থাকে, এসব জীবন ছবিহীন শুন্য ব্যাকগ্রাউন্ড, সবকিছু ফোকাসের বাইরে। অনেকটা প্রাত্যহিক রঙ চায়ের মত কটকটা লিকার তবুও স্বাদহীন। সারাদিনের ক্ল্যাসিকাল কর্মব্যস্ততার পর এই জানালার পাশটা কেমন অদ্ভুত টনিকের মত কাজ করে।  আচ্ছা জন্মান্ধ মানুষের কাছেও কি বিষাদের রঙ নীল? তাদের কি নিজেদেরকে প্রেমিকের পাশে লাল শাড়িতে দেখতে ইচ্ছে করে? একটু একদিকে সরে যাওয়া টিপটা ঠিক করে দেয়ার সময় মানুষটার চোখের মুগ্ধতা বোঝে? রোদ্দুর বোঝে না। তার পৃথিবীতে একটাই রঙ। একদিন মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, মা আমি যে সব কিছু যেই রঙ দেখি সেটা কি রঙ? মা বলেছিল কালো। সেই থেকে রোদ্দুরের সবকিছুই কালো। তার অভিমানের রঙ কালো, বিষাদের রঙ কালো, আনন্দের রঙ কালো, উচ্ছ্বাসের রঙটাও কালো। শুনে শুনে সে বুঝেছে আকাশ নীল হয়, বেদনাও। রক্ত লাল হয়, কষ্টও। মেঘ সাদা হয়, শুভ্রতাও। বসন্ত রঙিন হয়, রংধনু

একান্ত বাস্তব

Image
গেলো মাসের বাজারের ফর্দটা এখনও পড়ে আছে টেবিলের উপর  ফর্দতে তোমার হাতের লেখাটা খুব এলোমেলো  বোধহয় আমিই জ্বালাচ্ছিলাম, পেছন থেকে।  বৃষ্টির ছাটে কাঠের টেবিল ভিজে জুবুথুবু  তুমি থাকলে কপালে একটা রামঝাড়ি ছিলো নিশ্চিত!  সেই ঝাড়ির পর আবক্ষ উষ্ণতার মিছিলও ছিলো নিশ্চিত। সেদিন অফিসের পার্টিতে যাবো বলে শার্ট খুঁজছিলাম হাতড়াতে হাতড়াতে খুজে পেলাম তোমার নীল অন্তর্বাস তোমার পরনে আমার পছন্দের অন্তর্বাস।  ইচ্ছে করেই কি ফেলে গেছো?  হবে হয়তো!  আমার পছন্দ পরিত্যাগ করলে-- নাকি আমার নিউরনকে প্রায়শ্চিত করার উপঢৌকন দিয়ে গেলে?  ইদানীং অফিস থেকে ফেরার পথে টিএসসি ঘুরে আসি খুব বেশি ঘুরে আসা হয়,  কিন্তু আমারও আর ফেরার তাড়া কোথায়?  প্লেটভর্তি ফুচকা আর কয়েক কাপ ধোঁয়া ওঠা রঙ চা  কিংবা-  একহাতে বেনসন অন্য হাতে প্রেমিকা  মানুষগুলোকে দেখি  নিজের অতীত দেখি  কেমন অবশ অবশ লাগে।  এখন আর রাতে সিগারেট খেয়ে ঘর গন্ধ করি না জানো? তুমি থাকলে কি খুশি হতে?   মাঝরাত্তিরে জ্যাক ড্যানিয়েলসের পেগ,  পাকস্থলীতে যতক্ষণ না চিড়চিড়ে অনুভূতির জানান দেয় ততক্ষন জেগে থাকি।  এখন আমি নি

পাজরবন্দী একাকীত্ব

অবশেষে হিমবাহ বুকে নিয়ে,  রয়ে যাবো ছাইবর্ণ রাত্রির বেশে পলাতক।  হরিৎবর্ণ জ্যোৎস্না অথবা, ছুয়ে থাকা বিবর্ণ নক্ষত্রের কানে  ঈশান বায়ু রেখে যাবে উপসংহার বার্তা  বিষণ্ণ বোহেমিয়ানের ভাষায় কিংবা- নীল বুদবুদের মত চিড়ে ওঠা, পাজরবন্দী একাকিত্বের মতন।।

কারাদণ্ড

স্বয়ং আমার সাথে ঈশ্বরের একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল ব্যস্ততার কারণে তিনি আসতে পারেননি শত শত বছর ধরেই পারছেন না--- তার এই অপারগতার কারণে আমি ঈশ্বরকে কারাদণ্ড দিলাম, যাবজ্জীবন!

প্রশ্ন

কবিতারা কিভাবে আসে? আচমকা বজ্রপাতের মতন? নাকি ধীরপায়ে কচ্ছপের মত? গোটা গোটা অক্ষরে-- নাকি খাতার পেছনের ময়লা পাতার কাটাকুটি করা শব্দের মাঝে? নির্বোধ সেরেব্রামের অহেতুক আস্ফালনে? সরল বর্ণে নাকি যুক্তাক্ষরের বিষক্রিয়ায়? নাকি মোটা চশমার ফ্রেমের ভেতরে- আকাশ-কুসুমের নির্বাক সঙ্গমে? কবিতারা কখন আসে? অনেকটা ক্ষয়ে গেলে? নাকি দাঁতে দাঁত চেপে অত্যাচার শুষে নিলে? একহাতে ত্রানের বাক্স আর অন্য হাতে ছোট্ট ভাই- সব নিয়ে বৃষ্টিভেজা পাহাড়ের পথে কিশোরীর সংগ্রাম দেখলে? কিংবা আবক্ষ বিষাদে অনেকখানি জীর্ণ হলে? নাকি লাল-নীল আলোর নিচে জমে থাকা রেশমী চুড়ির কান্না শুনলে? সাফল্যের হাহাকারে কিংবা ব্যর্থতার আদরে? নাকি ফোকলা-দেঁতো সুখের সাথে খুব একচোট পাঞ্জা হলে? কবিতারা কখন সফল হয়? কবির পকেটের উষ্ণতায়? নাকি কোন অজ্ঞাতনামার সুখটানের সঙ্গী হলে?

শেষের শুরু

আরিফিন!!   তুই হলি আমাদের শেষের শুরু। শুনতে খুব অদ্ভুত শোনায় মানি, কিন্তু কথাটা বেমালুম সত্যি। তুই চলে যাওয়াতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে অনেক, তোর জন্য যতটা তার চেয়ে বেশি হচ্ছে এই ভেবে যে আমরা জানি এর পরে আর কিছুই আগের মত থাকবে না। এই কিছুই আগের মত থাকবে না ব্যাপারটা তুই জার্মানি না গেলেও ঘটতো, গেলেও ঘটতো। তাই তোর ভুমিকাটা এখানে পরোক্ষ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। তারুণ্যের বন্ধুত্বে যেই যেই সময়ে ফাটল ধরার কথা তা আমরা সাফল্যের সাথেই উৎরে গেছি। এখনের সময়টা আসলে না চাইতেও দূরে যাওয়ার, না চাইতেও ভুলে যাওয়ার। তুই চলে যাওয়ার ঘন্টা বাজার সাথে সাথে বুঝে গেছি এই পরের মাস থেকে পরবর্তী ৫ বছর আর কিছুই একরকম থাকবে না, এবং তারপর আর কখনো সেটা আগের মত হবে না, এমনকি হয়তো আর কখনো মনমতো হবে না। তুই চলে যাবি একদিকে, আমি চলে যাবো অন্যদিকে, ঊষা আমাদের চলে যাওয়ার পর নিজের হিসেব মেলাবে নিজের মত করে, শুভ ওর ক্রাইসিস মেটাতে মেটাতে ক্লান্ত থাকবে আর রব্বানি হয়তো অন্য আরেক রাফায়েল ভাইয়ের প্যাঁদানিতে থাকবে। আগে জানলেও জানতে চাইতাম না, বুঝলেও বুঝতে চাইতাম না। এখন বুঝি, কঠিন সত্য এটাই, এরপর কেউ চাকরি করবে, কেউ ব্যবসা, কেউ সংসার

সমসাময়িক ধর্ষণের গল্প

বারবার ঘড়ি দেখলে কি সময় ধীরে ধীরে যায়? এখন আপাতত রূপার তাই মনে হচ্ছে। গত ৪৫ মিনিটে কমপক্ষে কুড়িবার ফোন চেক করে ফেলেছে সে। আবিরের আসার নাম গন্ধ নেই। সময় নিয়ে রূপা যতটা সিরিয়াস, আবির ঠিক ততটাই বেখেয়াল। ওর হাতঘড়ি থেকে শুরু করে দেয়ালঘড়ি সব আধা ঘণ্টা আগানো, তাও সময়মত সে কোথাও পৌঁছাতে পারে না। মাথার উপরের সূর্যটা মনে হচ্ছে রূপার মেজাজের সাথে পাল্লা দিয়ে তাতিয়ে উঠছে। একবার ভাবলো রেগে মেগে চলেই যাবে, কিন্তু এতো সাধের গিফটতো দেয়া হবে না। সপ্তাহখানেক আগে আবিরের ফোনটা ছিনতাই হয়েছে। এখন আবার নতুন ফোন কেনার মত টাকা নেই জানে রূপা। তাই নিজেই নিজের জমানো টাকা থেকে একটা ফোন কিনেছে, খুব দামি কিছু না তবে কাজ চালানোর মত। আসার পরেই এমন একটা হাসি দেবে যে রূপার পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে উঠবে এবং একই সাথে সদ্য জন্ম নেয়া হাসিটাও আটকাতে পারবে না। নিজেই মাঝে মাঝে বোঝে না রূপা, এই ছেলের উপর রাগ কেন সে করতে পারে না।  আশেপাশে ভীষণ তোড়জোড় চলছে কোরবানীর। এই ঈদের আয়োজনটা কেমন মন ভারী করা, আনন্দের সাথে সবাই বিসর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মানুষমাত্রই বোধহয় এমন পারে। রূপার এসব ভালো লাগে না। মন অন্যদিকে ফেরাতে ফেসবুক ঘাটে স

অনধিকারের কাব্য

প্রিয় 'কানাবাবা'', সাধারণত শেষের পরে কিছু বাকি থাকলে তা উচ্ছিষ্টের তালিকায় যায়। কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে শেষের অবশিষ্ট যা থাকে, তা মহাকাব্যের খাতায় নাম লেখায়, জানো তো? আমরা বোধহয় অবশিষ্টের অংশীদার হয়ে গেছি। সেদিন মাঝরাতে তোকে চ্যাটে নক দিয়েছিলাম। খুব কবিতা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। বিধি বাম! তুই ব্যস্ত। অভিযোগ নেই। ব্যস্ত হওয়ারই কথা। আমার ইচ্ছের কথাটুকুও আমার গলা পর্যন্ত আটকে থাকলো। থাকারই কথা। কবিতা শোনানোর আবদারগুলোতে  এখন আর অধিকারের সুর নেই। অনুভূতিগুলো এক পা এগোয় তো দশ পা পেছোয়। মনে আছে, এক সময় কবিতা আবৃত্তির আগে স্বর ঠিক আছে কিনা জানার জন্য এক কবিতা বারবার শুনতে হতো আমাকে? মাঝে মাঝে কিছুটা বিরক্ত কি হতাম? হয়তোবা। কিন্তু তাতে শোনার কিংবা শোনানোর আগ্রহ কিছুতেই ভাটা পড়তো না। এই অধিকারেই বোধহয় সম্পর্ক চলে। মনে আছে, আমাদের মধ্যে কেমন ভীষণ প্রতিযোগিতা চলতো? কে কার চেয়ে কত বেশি ক্রিয়েটিভ তার প্রতিযোগিতা। কেউ যাতে না হারে আবার কেউ যাতে না জেতে, সেই খেয়াল রেখে তুমুল প্রতিযোগিতা। তোর ইংরেজির বাবুগিরি, আর আমার বঙ্কিমীয় বাংলার নাক উঁচু স্বভাব, খুব মিলেছিল কিন্তু কি বলিস? আগা গোড়া বিজ্

অনুযোগের অভ্যাস

ঝুম বৃষ্টির চেয়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টি আমার বেশি পছন্দের। শরীর ভেজে না, মন ভিজে যায়। ক্যান্সার হাসপাতালের মাঝের ছোট্ট ব্রিজের উপর দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম। ছোট্ট একটা কাজে এসেছিলাম। সময়ের আগেই চলে আসায় কানে অনুপমের "আমি আজকাল ভালো আছি" নিয়ে ঠায় দাড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। এই আবহাওয়ায় এমন উপায় যে ভীষণ উপাদেয় তা অস্বীকার করারও জো নেই। মানুষ দেখা পৃথিবীর মধুরতম নেশা। বিশেষ করে বর্ষার কদম ফুল কিংবা কয়েক জোড়া ব্যাঙের ডাক বঞ্চিত  বৃষ্টিবন্দী মানুষের জন্য। আমি মানুষ দেখছিলাম। একজন, এক জোড়া কিংবা পুরো পরিবার। মানুষেরাও আমাকে দেখছিলো। কেবিনে যেসব পরিবার কেমোথেরাপি কিংবা সার্জারির জন্য ভর্তি আছে তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা। দাঁত মাজতে মাজতে বৃষ্টির সাথে একজন মেয়েকে দেখাও কম সুখকর নয়। কতজনকে কবি বানিয়ে দিলাম আজ কে জানে!  আমার জীবনের মূল উদ্দেশ্য প্রস্থান। উঁহু, পালিয়ে যাওয়া নয় কিংবা ক্লান্ত হয়ে গেছি বলে চলে যাওয়া নয়। বরং হাঁপিয়ে যাওয়ার আগেই, মুখোশের মত চামড়ায় সংসার আটকে যাওয়ার আগেই প্রস্থান। যতটুকু জীবন আমি যাপন করতে চাই তার সবটুকু করেই তবে যাবো, হারিয়ে যাবো। পাহাড়ে কিংবা সাগরে। আমার মৃত্যু যেন

মৃত

Image
প্রিয় 'কানাবাবা', পুরনো চাল ভাতে বাড়ে-এই প্রবাদের উৎপত্তি কোথা থেকে বলতে পারো? যেখান থেকেই হোক, ব্যাপারটার সাথে জীবনের এক বিশাল যোগসাজশ আছে কিন্তু। পুরনো সম্পর্কগুলো কোন রসদ ছাড়াই কেমন এগিয়ে যায়, বহুদিন পরের কথোপকথনেও কেমন পুরনো সোঁদা গন্ধ পাওয়া যায়। অথবা সাহিত্যের খট্মট ভাষায় বলা যায়, পুরনো সম্পর্কগুলোতে এক শব্দেই একেকটা উপন্যাস হয়, আর এক লাইনেই বিশাল মহাকাব্য? আমার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় জানো টেলিফোন অপারেটর হতে। আমাদের কথোপকথন তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে শুনতে। পূর্ণেন্দু পুত্রীর আধুনিক সংস্করণ একটা আমরা কিন্তু প্রকাশ করেই ফেলতে পারতাম এর থেকে, কি বলো? ইদানিং তুমি ফোন দিলে আমি কেমন যেন আঁতকে উঠি জানো তো? কি বলবো কিছু বুঝে উঠতে পারি না, কখনো দেখা যায় তোমার কথার অর্থই ধরতে পারি না। পরিশিষ্ট প্রেমের আবেগ বলে একে ভুল করোনা কিন্তু! এসব আবেগ, অভ্যাস সব মামুলি বিষয়। বাজারে সদ্য আসা ডিটারজেন্ট দিয়ে একবার ধুলে সব কিছু ধুয়ে মুছে সফেদ হয়ে যাবে। আমারটাও গ্যাছে, বাষ্পীভূত হয়ে, পেন্ডুলামের সহস্র দোলনে, অ্যাবস্ট্রাক্ট পেন্টিং এর মত উড়ে চলা সিগারেটের ধোঁয়া আর তপ্ত নোনা জলের স্বাভাবিক এবং সহজাত প্র

অতিব্যস্ত অনাহূত

Image
মাঝ রাত্তিরে বুকের কষ্ট রক্তে ছড়িয়ে গেলে খুব আরাম হয়। গলা পর্যন্ত আটকে থাকা বুর্জোয়া কান্নাগুলো আহ্লাদি শুয়োপোকার মতন দিকভ্রান্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে, পুরো শরীরে, অনেকটা কিংবা পুরো হিরোইনের মত। মনে মনে বলি, যাক শালা! কষ্টের সুষম বণ্টন হলো তবে! ক্লান্ত ময়রার মত দুঃখগুলোকে মাছি মনে করে এদিক ওদিক থেকে সরাতে থাকি। ঠিক যেমন শওকত আলী বলেছিলেন দীর্ঘদিনের শোকে হাহাকার থাকে না, তেমনি বিষাদবিহীন কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছি পুরো শরীরে ক্যান্সারের মত, নাকি এইডসের মত? তলপেটের নিচটায় প্রায়ই একরকম শিরশিরে অনুভূতি হয়, মনে হয় কোন বিশালাকার সরীসৃপ আমার চামড়ার সর্বস্ব চেটে এগিয়ে চলছে। আমার ভীত সন্ত্রস্ত তলপেট জাগ্রত হয়ে ওঠে, মুহূর্তের মাঝে, এমনকি ঘুমের মাঝেও। সেই চামড়ায় লেপ্টে থাকা জাগ্রত অনুভূতিটা জিতেন্দ্রিয়ের মত এগিয়ে যেতে থাকে আমার যোনিপথের দিকে। হ্যাঁ, এই নামেই চিনেছিলাম একে। তবে চেনার বহু আগেই জেনেছিলাম, দেখার অনেক আগেই বুঝেছিলাম। চামড়ার মাঝে জলন্ত সিগারেট ঠেসে ধরার মত একটা অনুভূতি হয়। জ্বলাটা ওখান পর্যন্ত থাকলেও হতো, কিন্তু থাকে না। অবাধ্য স্রোতের মত শিরা-উপশিরার মধ্য দিয়ে ওপরে উঠতে থাকে। মাঝে মধ্যে মিশে যায় আমা

সভ্যতা জরাগ্রস্ত ভাত কিংবা ডালের হিসেব

বাংলা সাহিত্যে ভীষণ বৃষ্টি আর রোদের উদাহরণ দিতে সবসময় কাকের ব্যবহার হয় কেন? তৃষ্ণার্ত কাকের মতন কিংবা কাকভেজা! কাক বোধহয় এই বাংলার সাহিত্যাকাশে পাখি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি! সে যাই হোক। আপাতত আমি কাক-গরম অবস্থায় সেদ্ধ হচ্ছি আর মনেপ্রাণে একটা ভালো খাবারের দোকান খুঁজছি।  দলবেঁধে সকাল বেলা উদ্দেশ্যহীনভাবে চলে এসেছি সোনারগাঁও পানাম সিটিতে। একদম মাঝারি ধরণের অনেকগুলো জমিদার বাড়ি আর উদার সূর্যের আপ্যায়নে অতিশয় আহ্লাদিত হয়ে যখন পেটপূজার রসদ খুঁজছি সেই মুহূর্তে একজন দোকানদার যেচে এসে একটা দোকান দেখিয়ে দিলেন। দোকানের সুনাম এজন্য যে এখানে ঘরের রান্না পাওয়া যায়। আর উপায় না পেয়ে সেখানেই বসে গেলাম উদরপুর্তি করতে। ইটকাঠ পাথরের শহরের গ্যাসের চুলার রসালো খাবারের মাঝে ভুলেই গিয়েছিলাম লাকড়ির চুলায় রান্না অন্যরকম হয়। সেই রকমটার বর্ণনা আমার কলম দিয়ে ঠিক জমে উঠবে না, জমাতে হলে হয় সেকালের রবিবাবুকে লাগবে না হয় একালের সৈয়দ মুজতবা আলীকে। সেই ভুলে যাওয়া খাবার পেটে চালান করে দিয়ে যখন বিল দিতে গেলাম তখন বৃদ্ধ মালিক আমাদের ডালের দাম রাখলেন না। কেন জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, "আপনেগো যেই ভাত দিসি সেইগুলান তো পু

হুট করে মারা যেতে চাই

আমি একদিন হুট করে মারা যেতে চাই। যাতে আমার সাথে এক আকাশ অসমাপ্ত কথোপকথন থেকে যায় আমাকে না বলা শব্দগুলো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাতে কারো বুকে শেলের মত বিঁধে থাকে, আমার সাথে শেষ না করা ঝগড়াটা যেন হিরোশিমার বদলে ঝুম বৃষ্টি হয়ে নামে, আমার ফেলে আসা আড্ডার ক্যাফেটা যাতে পরিণত হয় আধুনিক কফি হাউজে। আমি একদিন হুট করে মারা যেতে চাই। আমার ওপর ধরে রাখা পাহাড়সম অভিমানগুলো যাতে হুড়মুড় করে ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যাতে আমার সাথে করা অত্যাচারগুলো প্রতি রাতে কারো ঘরে কষ্টপোকা হয়ে উড়ে আসে, যাতে আমার আজন্ম আদরে লালিত সকল 'যদি' এবং 'হয়তোবা' অনাকাঙ্খিত অবসরে যেতে পারে। আমি একদিন হুট করে মারা যেতে চাই। যাতে আমার জন্য কয়েক বুক হাহাকার জন্ম নেয়। আমার বিগত প্রেমিকের বুকের অবশ অনুভূতিগুলো যেন ভয়ংকর সরীসৃপের মতন নড়ে ওঠে, যাতে আমার তথাকথিত আপন মানুষদের মাঝে এক ব্ল্যাকহোল সমান অপ্রাপ্তি জমা হয়। আমি একদিন হুট করে মারা যেতে চাই। কারণ মানুষ সুখ নয়, দুঃখ লালনে বাঁচে, কারণ মানুষ পূর্ণতা নয়, আফসোস মনে রাখে।

সময়ের আফসোস

আমি প্রতিদিন সকালে ভার্সিটি যাওয়ার সময় গাড়ি যখন বিজয় সরণী মোড়ে থামে , ঠিক সেই সময় আমার ড্রাইভারের একটা ফোন আসে। আমার ড্রাইভার সাধারণত গাড়িতে ফোন ধরে না , কিন্তু এই ফোন ধরে। খুব আগ্রহ নিয়ে ধরে। ঐ পাশ থেকে একটা আবছা চিৎকার ভেসে আসে-আব্বু! ড্রাইভার-হ্যা আব্বু ? ওপাশ থেকে কিছু ইনিয়ে বিনিয়ে কথা। ড্রাইভার-স্কুলে যাইতেসো আম্মা ? অপর পাশে হ্যা বা না কিছুই আমি শুনতে পাই না। ড্রাইভার: আইচ্ছা। রাস্তার এক সাইড দি যাইও। দেখি দেখি যাইও কেমন ? আব্বু গাড়ি চালাইয়ের। রাখি কেমন ? আমার ড্রাইভার খুব লজ্জা লজ্জা স্বরে বলে আপা আমার বড় মেয়ে। এই বচ্ছর প্রথম স্কুলে জাইতেসে। রওনা দেওনের আগে আমারে একবার ফোন দেয়। না ধইরলে খুব মন খারাপ করে। এই বলে গাড়ি চালানোয় মনযোগ দেয় সে। আমি মানুষটার ঠোঁটের কোণায় তাকিয়ে থাকি। আলতো তৃপ্তির হাসিটা মোছে না তার মুখ থেকে। আজকাল আমি অনেকটা অপেক্ষা করেই থাকি মেয়েটার ফোনের জন্য। পুরো কথোপকথনে আমি ' আব্বু ' ছাড়া বিশেষ কিছুই শুনতে পাই না। কিন্তু পুরো সময় জুড়ে আমাকে ঘিরে থাকে এক অদ্ভুত ইথার-ভালোবাসা। বাবা-কন্যার ভালোবাসার এই রূপটুকু দেখে আমার কি আফসোস হয় কোন? নাহ।

হযবরল-৩

আকাশের বোধহয় ভীষণ রকমের মেজাজ খারাপ। কিছুক্ষন পর পর গুড়ূম গুড়ূম করে বিতিকিচ্ছিরি শব্দ করে চলেছে। সেই সাথে বাজখাই গলায় একেকটা বজ্রপাত! শালার হতচ্ছাড়া এসাইনমেন্ট, ল্যাব রিপোর্ট সব জমা দেয়ার তারিখ একদিনে পড়েছে। নাহলে আমি সাধের বিছানায় কুন্ডূলি পাকিয়ে বেশ ঐ বেয়াড়া আকাশের হম্বিতম্বি দেখতে পারতাম। ছোট থাকতে গল্প শুনেছিলাম। আকাশ নাকি এতো এতো উপরে ছিল না। হাতের নাগালেই ছিল। জাদুর বুড়ি একদিন মেজাজ খারাপ করে ঝাড়ু দিয়ে আকাশকে উপরের দিকে মেরেছিল। তাতেই আকাশ অভিমান নাগালের বাইরে চলে গেল। যত্তসব গাঁজাখুরি। ছোটবেলায় অবশ্য এসব গাঁজাখুরিই বেশ লাগতো। আমি কি লিখতে বসেছি? গল্প? কবিতা? উপন্যাস? জানি নাহ লেখকদের উপসংহার জানতে মানা...  

তোমরা বরং “বংশোদ্ভূত”ই থাকো!

একটা পুরনো প্রবাদের বাংলাদেশী সংস্করণ বলি , “ গেয়ো যোগী ভিগ পায় না , আর যখন অন্য দেশে গিয়ে ভিগ পায় তখন বাংলাদেশীরা যোগীকে নিজের মনে করে । ” ধর্ম বাদে অন্য যেকোনো বিষয়ে বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে এই প্রবাদ গ্রহণযোগ্য । নিজের সম্পদ বিকিয়ে দিয়ে তাকেই আবার সম্পত্তিরূপে গণ্য করা বাঙ্গালিদের আজন্ম স্বভাব। কথাগুলো বলছিলাম মার্গারিটা মামুনের অলিম্পিকে স্বর্ণ পদক জয়ের প্রেক্ষাপটে । পৃথিবীতে ৭৫টি দেশ আছে যাদের পকেটে অলিম্পিকের স্বর্ণপদক জোটেনি এখনও। এর মধ্যে আমার সাধের বাংলাদেশও আছে। বাংলাদেশ অলিম্পিক জেতেনি, না জিতেও আরও অনেক দেশোদ্ধারমূলক কাজ করেছে, সেই জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় আমরা আপাতত না যাই। কথা হচ্ছে, যখনই “বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত” মার্গারিটা মামুন রাশিয়ার হয়ে পুরস্কার জিতে নিলেন তখনই শুরু হলো তাকে নিয়ে বঙ্গ-বন্দনা। হুজুগে বাঙালি পারলে আর কোন মুকুট না পেলে লাক্স চ্যানেল আইয়ের মুকুট নিয়ে পড়িয়ে দেয় মার্গারিটাকে। একবার আমাকে বলবেন, মার্গারিটা আমাদের কিভাবে হলো? রামপাল, বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন, মুসলিম রাষ্ট্র- সব আমাদের হতে পারে, মার্গারিটা না। একবার চিন্তা করে দেখুনতো , মার্গারিটা যদি আমাদের দেশে বে

একা হতে ভুলে গেছি

ইদানীং একা হতে ভুলে গেছি কোন মানুষ না থাকলেও  মনে হয় দূর থেকে এক জোড়া অথবা কয়েক জোড়া চোখ খুব সাবধানে নিরীক্ষণ করছে  আমার প্রতিটি চলাফেরা আমার নিঃশ্বাস প্রশ্বাস এমনকি আমার চাহনি! তবে এই কয়েক জোড়া চোখই আমার একমাত্র সম্বল। আমি যেখানেই যাই  পেছনে পেছনে এক জোড়া চোখ নিয়ে যাই,  কেউ আমাকে দেখছে কেউ আমার কর্মকান্ডের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে এটা ভাবতে বেশ লাগে নিজেকে মানুষ মানুষ লাগে। কিন্তু আমার শব্দগুলোর এই জোড়া চোখের সাথে ভীষণ শত্রুতা!  গভীর রাতে ল্যাপটপ স্ক্রিনের দিকে কিংবা সদ্য কেনা ঝকঝকে খাতার দিকে তাকিয়ে থাকি শব্দেরা আর ধরা দেয় না। মনে হয় এক জোড়া চোখ তাকিয়ে আছে বুভুক্ষের মতন, আমার কবিতার জন্যে আমার গল্পের জন্যে আমার শখের শব্দগুলোর জন্যে! আমি খুব চাই লেখার ঝড়ে দিগ্বিদিক শুন্য হয়ে যাবো,  কিন্তু ঝড়ের আগেই আমার হাত নুয়ে পড়ে। আমি প্রবল উৎসাহে আবার লিখতে বসি এবার আরো গভীর রাত, যাতে মার্ক্স সাহেবের ক্যাপিটালিজমের ঘ্যানঘ্যান আমার কানের পর্দায় বাড়ি না খায়,  আমি কাগজে কলমে জন্ম দিতে চাই এমন ভালোবাসার যাতে,  প্রেমিকের প্রতারণায় আত্নহত্যা

অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ

লাবণ্য ঠোঁট খুঁটছে। ছোটবেলায় অনেক বেশি তিন গোয়েন্দা পড়ার শখ ছিলো। কিশোর পাশা ছিলো পছন্দের চরিত্র। কিশোর খুব চিন্তায় থাকলে ক্রমাগত ঠোঁট খুঁটতে থাকতো। অভ্যাসটা লাবণ্যও রপ্ত করেছে, নিজের অজান্তেই। আজ সে ভীষণরকমের চিন্তিত । আর কিছুক্ষণ পরই কাজী আসবে লাবণ্যের সই নিতে। তার আর আরেফিনের বিয়েটা পারিবারিকভাবেই ঠিক করা হয়েছে। একসময় প্রেম, বিয়ে এসবের প্রতি একটা অন্যরকম টান কাজ করতো এখন আর সেসব কিছুই নেই। আগুন কয়লায় পোড়া জীবনে এসব শখ কর্পুরের মত উড়ে গেছে ।  খুব বাস্তববাদী হয়ে গেছে এখন লাবণ্য। ব্যর্থ প্রেমগুলো থেকে এটুকু বুঝেছে সম্পর্কে ভালোবাসা যতই থাকুক নারী নারী আর পুরুষ পুরুষই থাকে। ছোটবেলা থেকেই সে অনেক একরোখা স্বভাবের ছিলো, অন্যায় সহ্য করতে পারতো না, আর মেয়ে বলে অসমতা তো কখনই পারতো না । কখনো মা তাকে ঘরের কাজ করতে বললেই  লাবণ্যের প্রশ্ন থাকতো, “কেন ভাইয়া বাসার কাজ করে না”? একসময় মা বলতেন, “ও তো ছেলে। ও কেন এসব কাজ করবে এসব তো মেয়েদের কাজ”।  ধীরে ধীরে আরো নিয়ম দেখতে থাকলো সে। মেয়েদের ব্যাগ হাতে নিয়ে দাড়ালে ছেলেদের আত্মসম্মানে লাগে, রান্না করাটা মেয়েদেরই শেখা বাধ্যতামূলক বিয়ের আগে ছেলেদের নয়,

হ-য-ব-র-ল-২

বিজ্ঞানের হিসেবনিকেশ যদিও বলে ভালোবাসা নিউরন আর ডোপামিনের দুর্নিবার ফন্দি ছাড়া কিছু নয়। তবে তোমার আমার রাজ্য জয় করা মিথ্যেগুলো ভাবলে বুকের মাঝেই শিরশির করে, মাথার মাঝে নয়। এখন বুঝি মানুষ কেন বলে কষ্ট হলে বুকে ব্যাথা করে। তোমার স্মৃতির জ্বালাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভেবেছিলাম তাড়িয়ে দিলে বোধ হয় একটু শান্তি হবে। আজ যখন মনের হাজারো কিনার হাতড়ে হাতড়ে তোমাকে খুজে পেলাম না, তখন ভেতরে কোথায় যেন ছ্যাঁত করে জ্বলে উঠলো। কানের কাছে পোস্টমর্ডান ক্যাচক্যাচানি বলে, তোমাকে মনে রাখা কষ্টের, তোমাকে ভুলে যাওয়া লজ্জার!

Dying is Easy, Let’s Live!

The movie “Suicide Squad” (2016) possessed a precious short conversation where the Joker asked Harley Quinn, “Would you die for me?” When Harley answered yes, the Joker replied, “That's too easy. Would you live for me?” Yes! Dying is easy, actual battle is living. The suicide estimation of World Health Organization (WHO) in 2012 has doodled the picture quite clearly. It has published that over 800,000 people die each year due to suicide. Also, according to Suicide.org, the global suicide rate is 16 per 100,000 population which has   increased to 60% in the past 45 years. Centers for Disease Control and Prevention has claimed suicide as the tenth leading cause of death for all ages in 2013. On average, one person dies by suicide every 40 seconds somewhere in the world. Isn’t that a wakeup call? Doesn’t the estimation suffice how hard it is to live? In 1993, a 6-year old girl living in Florida stepped in front of a train. She left a note saying that she "wanted to be with her